স্বদেশ ডেস্ক:
স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি-অনিয়মের অন্ত নেই। নিয়োগবাণিজ্য, কেনাকাটায় অনিয়মের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। করোনাকালে দুর্নীতির মাত্রা সব কিছুকে ছাপিয়ে সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এই স্বাস্থ্য খাত। করোনা-সামগ্রী কেনায় অনিয়ম, ঠিকাদার সিন্ডিকেট, সর্বশেষ রিজেন্ট হাসপাতালকে করোনা-চিকিৎসার অনুমোদন, জেকেজি হেল্থ কেয়ার নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে করোনার নমুনা সংগ্রহের অনুমোদন এবং টাকার বিনিময়ে ভুয়া করোনা রিপোর্ট প্রদানের ঘটনায় দেশ-বিদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। করোনার ভুয়া রিপোর্ট প্রদান ও করোনা টেস্ট করে অবৈধভাবে টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো: সাহেদ ওরফে সাহেদ করিম এবং জেকেজি হেল্থ কেয়ারের চেয়ারম্যান ডা: সাবরিনা চৌধুরী ও তার স্বামী আরিফ চৌধুরীকে।
তাদের গ্রেফতারের পর করোনা কেলেঙ্কারির ঘটনাগুলো বেরিয়ে আসছে একের পর এক। কিভাবে এই বিতর্কিত দুই প্রতিষ্ঠানকে করোনাচিকিৎসা ও নমুনা সংগ্রহের অনুমোদন দেয়া হলো এই প্রশ্নের তীর এখন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের দায়িত্বে থাকা শীর্ষ ব্যক্তিদের দিকে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা: আবুল কালাম আজাদ গত মঙ্গলবার পদত্যাগ করেছেন। গতকাল বুধবার অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল) আমিনুল ইসলামকেও সরিয়ে দেয়া হয়েছে। এর আগে বদলি করা হয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো: আসাদুল ইসলামকে। এখন সব মহলে আলোচনা হচ্ছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ ব্যক্তি তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেককেও সরিয়ে দেয়া হচ্ছে কি না।
জাহিদ মালেক ২০০৮ সালে মানিকগঞ্জ-৩ আসন থেকে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার বাবা অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মকর্তা মরহুম আবদুল মালেক ছিলেন এরশাদ সরকারের আমলে ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র এবং বস্ত্রমন্ত্রী। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের পর মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েন তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আসেন জাহিদ মালেক। স্বাস্থ্য খাতে নিয়োগবাণিজ্য ও দুর্নীতি, অনিয়মের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এই খাতে ঠিকাদারদের সিন্ডিকেট খুবই শক্তিশালী। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের যেকোনো নিয়োগে বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। অতীতে এবং বর্তমানে স্বাস্থ্য খাতের শীর্ষ ব্যক্তিদের ‘ম্যানেজ’ বা তাদের স্বজনদের সমর্থনে এই ঠিকাদার চক্র গড়ে ওঠে বলে অভিযোগ রয়েছে।
গত মার্চ থেকে দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। আস্তে আস্তে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। করোনা প্রতিরোধ কার্যক্রমে অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনাসহ নানা অভিযোগ ওঠে মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের শীর্ষ কর্তাদের বিরুদ্ধে। এরই মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো: আসাদুল ইসলামকে সরিয়ে নতুন সচিব করা হয় আব্দুল মান্নানকে। নানা আলোচনা সমালোচনার মধ্যে গত মঙ্গলবার পদত্যাগ করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল) আমিনুল ইসলামকেও সরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে গতকাল স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, কেবল হাসপাতাল শাখা নয়, যে শাখাগুলো বেশি সমালোচিত হয়েছে, সেগুলো ভালোভাবে খতিয়ে দেখে সরকার শক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হওয়া এবং সমন্বয়হীনতাসহ অনিয়ম-দুর্নীতির যেসব অভিযোগ উঠছে মন্ত্রী হিসেবে জাহিদ মালেকও তার দায় এড়াতে পারেন না বলে বিভিন্ন মহল অভিমত দেয়। স্বাস্থ্যসচিবের বদলি, স্বাস্থ্য অধিদফতর মহাপরিচালকের পদত্যাগ বা সরিয়ে দেয়া এবং অধিদফতরের গুরুত্বপূর্ণ উইং হাসপাতালের পরিচালক আমিনুল ইসলামকে অপসারণের সিদ্ধান্তের পর এখন নানা মহলে গুঞ্জন শুরু হয়েছে, তাহলে কি স্বাস্থ্যমন্ত্রীকেও সরে যেতে হচ্ছে কি না। স্বাস্থ্যমন্ত্রী পদত্যাগ করবেন নাকি তাকে সরিয়ে দেয়া হবেÑ এ নিয়ে অবশ্য প্রকাশ্যে কেউ মুখ খোলেননি। তবে, সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য বিভাগের সব প্রতিষ্ঠানের ভালো-মন্দ দেখভালের দায়িত্ব মন্ত্রীর। করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থতার অভিযোগ সচিব, স্বাস্থ্য মহাপরিচালকের ওপর বর্তালে সর্বোচ্চ কর্তাব্যক্তি হিসেবে মন্ত্রীর ওপরও বর্তায় বলে মনে করছেন অনেকে।
এ দিকে কিছু দিন আগে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ মারা যান। তার জায়গায় কে আসছেন তা নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজনের নাম আলোচনায় এলেও ময়মনসিংহ-৭ আসন থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য হাফেজ রুহুল আমিন মাদানীর নামটিই বেশি শোনা যাচ্ছে। হাফেজ রুহুল আমিন মাদানী এর আগে ১৯৯৬ সালেও জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বর্তমানে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। এ ছাড়া, ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করে আসছেন হাফেজ রুহুল আমিন মাদানী। তিনি ছাড়াও ঝালকাঠি-১ আসনের বজলুল হক হারুন এবং চট্টগ্রাম-২ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যার সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারীকে নিয়েও গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। তাদের মধ্যে বজলুল হক হারুন তিনবারের সংসদ সদস্য।
আগামী ১ আগস্ট পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে। ঈদের পরে ধর্মমন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নতুন কাউকে দায়িত্ব দেবেন প্রধানমন্ত্রী। সে ক্ষেত্রে হাফেজ রুহুল আমিন মাদানীর সম্ভাবনাই বেশি বলে জানা গেছে। অন্য দিকে, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেককে সরিয়ে দিয়ে তার জায়গায় কোনো চিকিৎসক সংসদ সদস্যকে মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বে দেখা যেতে পারে।